বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পূর্বশর্ত চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঠিক ব্যবহার। রুশ বিপ্লবের মহান নেতা লেনিনকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, বিপ্লব কাকে বলে? লেনিন উত্তর দিয়েছিলেন, বিপ্লব হলো দ্রুত বিদ্যুতায়ন। তিনি শুধু ওটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি। সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে পুরো সোভিয়েত ইউনিয়নকে দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ জারি করেছিলেন, যার ধারাবাহিকতায় ১৯৩৩ সালে সোভিয়েত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সমাপ্তি পর্যায়েই ৮৭ লাখ বর্গমাইল আয়তনের বিশ্বের সর্ববৃহৎ দেশটির প্রায় পুরোটাই বিদ্যুতায়নের সুবিধা অর্জন করেছিল। বাংলাদেশের আয়তনের ১৫৭ গুণ বড় সোভিয়েত ইউনিয়নকে মাত্র ১৮ বছরে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা যে কত বড় সাফল্য ছিল, তা উপলব্ধি করা কঠিন বৈকি। অন্যদিকে মাত্র ৫৫ হাজার বর্গমাইলের সামান্য বেশি আয়তনের বাংলাদেশকে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর ৫০ বছর লেগে গেল! তবুও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন বিদ্যুৎ উৎপাদনকে গত এক যুগে যথাযোগ্য অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করে সে সময়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত নাজুক। লোডশেডিং ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সে অবস্থা উত্তরণে শেখ হাসিনা সরকার বিদ্যুৎ খাত সংস্কার কর্মসূচীর আওতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি বিনিয়োগ সহ বিদ্যুৎ খাতের কাঠামোগত সংস্কার করে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতকে আলাদা করে সংস্থা ও কোম্পানি গঠন করা হয়। বিদ্যুৎ খাতের ন্যায় জ্বালানি খাতেও কাঠামোগত সংস্কার করে নানাবিধ সংস্থা ও কোম্পানি গঠন করা হয়। ১৯৯৬-২০০১, এই সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার লক্ষ্যে যে ভার্টিকাল সেপারেশনের মাধ্যমে সঞ্চালন খাতকে উৎপাদন ও বিতরণ খাত থেকে পৃথককরণের জন্য কোম্পানি আইনের আওতায় ১৯৯৬ সালে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড গঠন করা হয়।এই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১,৬০০ থেকে ৪,৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে আইপিপি নীতি গ্রহণ করে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বার্জ মাউন্টটেন্ড বিদ্যুৎ নিয়ে আসেন। এছাড়া ক্যাপটিভ নীতি করে শিল্পে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। তখন আইপিপি করার ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যেও দ্বিধা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে এসব সমস্যার সমাধান করেন। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি অংশগ্রহণ প্রায় ৫০ ভাগ। তাছাড়া বিদ্যুৎ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
২০০১-২০০৮ র্পযন্ত বিদ্যুতের অভাবে দেশের অর্থনীতি ছিল পর্যদুস্ত, শিল্প, বাণিজ্য ছিল স্থবির এবং জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত। প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং এর কবলে মানুষের জীবন ছিল অসহনীয়। অথচ শুধুমাত্র ব্যাবসায়িক ফায়দা লুটার জন্য মাইলের পর মাইল বিদ্যুতের খাম্বা আর তার লাগানো হয়েছিল।
২০০৯ সালের বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ মন্দাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন দিন বদলের সনদ ‘২০২১ রূপকল্প’। তিনি বিদ্যুৎ খাতের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিলেন ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে। বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী জাতিকে দেওয়া তার প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। ২০২১ এর অনেক আগেই বিদ্যুৎ সবার ঘরে পৌঁছেছে। বিদ্যুতের অগ্রযাত্রার ফলে বিশ্বের অনেক দেশকেই পিছনে ফেলে আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (MDG) অর্জন করে সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছি।বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর দুই মেয়াদে দেশ পরিচালনার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে এক দশকে বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে, যা বিগত ১০০ বছরেও হয়নি। সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার প্রদান করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রেখে জ্বালানি বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, এলএনজি, তরল জ্বালানি, ডুয়েল-ফুয়েল, পরমাণু বিদ্যুৎ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণসহ বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
মোঃ সুমন খন্দকার।
১০/০৫/২০২৪ইং
Leave a Reply